< Go Back Home

পাটুল ভ্রমন, মিনি কক্সবাজারে কয়েকঘন্টা – ফটোব্লগ

পাটুল যাওয়ার পরিকল্পনা বেশ কিছুদিন ধরেই হচ্ছিলো। একাধিক গ্রুপের সাথে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও, কোন না কোন একটা সমস্যা কারনে শেষ পর্যন্ত কাগজ কলমেই থেকে গেছে সব পরিকল্পনা। আমার জীবনের আর সব ইভেন্ট এর মতো, এটাও হয়ে গেছে হটাৎ করেই, এক বাটি নুডুলস আর আমরা চারজন। গন্তব্য, মিনি কক্সবাজার খ্যাত পাটুল, নাটোর।

পাটুল

পাটুল
[ শুরুতেই বলে রাখা ভালো, এটা একটা ফটোব্লগ, লেখা কম ছবি বেশি থাকবে ]

আগের দিন রাতে একদম হুট করেই ক্যামেরা কিনে ফেললাম। বাসায় ফেরার পথে সেতু আপুকে ( Samira Jannat Shetu) বললাম চলো কাল পাটুল যাই, বহুদিন ধরেই যাবো ভাবছি,যাই চলো কালকে। ড্রাইভিং সিট থেকে পিয়াস ভাই ও বেশ জোড়ে সোরেই জানান দিলেন যে উনিও যাবেন। যেই কথা সেই কাজ, পিয়াস ভাই আবার আবদার করলেন, সেতু আপুকে নুডুলস রান্না করে আনতে হবে। নুডুলস ছাড়া এ যাত্রা আমরা তাকে আর ছাড়ছি না।
সকাল ১১ টায় যাত্রা শুরু করার কথা থাকলেও, আমার ঘুম থেকে উঠতে উঠতে বাজলো সাড়ে ১২ টা। পিয়াস ভাইকে কল দিয়ে গাড়ি আনতে বললাম বাসার সামনে, কিছুক্ষনের মধ্যেই বের হবো। সেই কিছুক্ষন গিয়ে ঠেকলো দুপুর ২ টায়। সেতু আপু আর কান্তিকে (Sumaya Rahaman Kanti )  তুলে নিয়ে রওনা দিতে দিতে তখন ঘড়ির কাঁটায় ৩ টা বাজে। শুরু হলো পাটুল এর পথে আমাদের যাত্রা।
যাত্রা শুরুর অপেক্ষায়
যাত্রা শুরুর অপেক্ষায়
বলে রাখা ভালো, রাজশাহী থেকে নাটোর শহর পর্যন্ত রাস্তা বেশ ভালো হলেও, এরপরের রাস্তা মোটেও সুখকর নয়। প্রায় ৬৭ কিলোমিটার এর যাত্রাপথে ভাঙ্গা রাস্তা, সরু মোড় আর অপ্রয়োজনীয় বাঁক, কোনটারই কমতি নেই। উত্তরা গণভবন পার হওয়ার পরে বাকি রাস্তায় মোটামুটি সবুজ এর সমারোহ। ছোট খাটো কিছু বাজার ছাড়া সেরকম কোন বড় কোন জটলা নেই। মাঝে এক ফাঁকে নেমে আমরা কিছু ফটোসেশন করে নিলাম।

সেতু আপু ও কান্তি

সেতু আপু ও কান্তি

ক্যামেরার পেছনে ছিলাম বলে ক্যামেরার সামনে আমার কোন ছবি নেই, আপাতত। মাঝে কান্তির বট গাছে টারজান ষ্টাইলে ঝোলাঝুলির কিছু ছবি আছে, যা হয়তো কখনোই আলোর মুখ দেখবে না। খানিকটা ঝাঁকি, খানিকটা রোদ মাথায় করে অবশেষে পৌছালাম কাঙ্খিত গন্তব্যে, পাটুল। পাটুলে ঢুকেই প্রথমে যেটা চোখে পড়লো, ভীড়। লোকে লোকারন্য পাটুলের চারপাশ। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার মধ্যে ছিলো তরুনরা। যে যার মতো নিজস্ব ধাঁচে নেমে পড়েছে পাটুলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে।
গাড়ি পার্ক করে প্রথমে দুই দলে ভাগ হয়ে দ্বায়িত্ব ছিলো কিছু চটকদার খাবার এবং পানির ব্যবস্থা করা। পাটুলের চারপাশে দোকান আছে বেশ কিছু, রাজশাহী থেকে পানি নিয়ে আসাটা অবান্তর মনে হয়েছে। চারপাশের খাবারের মধ্যে চোখে পড়লো বারোভাজা, আমড়া মাখা, চিনি ও গুঁড়ের গজা, শুকনো আলুর চিপস, তেলে ভাজা বেশ কিছু ধরনের চিপস ও নিমকী।
পাটুল - বারোভাজা মাখা
বারোভাজা মাখা
পাটুল - চিনির গজা
চিনির গজা
পাটুল - চিপস
চিপস
পাটুল - বারোভাজা প্রস্তুতীকরণ
বারোভাজা প্রস্তুতীকরণ

এছাড়াও চারপাশে সিগারেট, কোমল পানীয়, বাদাম সহ অন্যসব সচরাচর জিনিস পাওয়া যায়। কেনাকাটার পর এবার নৌকা খুঁজে পানিতে নেমে যাওয়ার পালা।

 

পাটুল - যাত্রা শুরু

যাত্রা শুরু

পাটুল এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এর বিশালতা। পাটুল হয়তো আকারে দেশের অন্য সব বিলের সমান না হতে পারে, কিন্তু এর পাড়ে দাঁড়িয়ে এর অপার বিশালতার দিকে তাকিয়ের নিজের ক্ষুদ্রতার অনুভব করা যায়।

ইঞ্জিন চালিত নৌকার ছাউনিতে বসেই প্রথমে খাবার গুলোকে মুক্ত করার কাজ শুরু হলো। এই ফাঁকে ক্যামেরা হাতে বাইরে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করলাম পাটুলের কিছু চেহারা ফ্রেমবন্দি করার।

 

আমাদের মাঝি ভাই

আমাদের মাঝি ভাই
মাঝির অ্যাসিটেন্ট
মাঝির অ্যাসিটেন্ট

পাটুলের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু গ্রাম, যখন পানি চারেদিকে থৈ থৈ করে, এই গ্রাম গুলো দ্বীপের মতো জেগে থাকে বিশালাকার এই জলাধারের মাঝে। এই সময়টাতে উনাদের চলাচল এর প্রধান মাধ্যম হলো ইঞ্জিন চালিত নৌকাগুলো। এই নৌকাগুলোর বেশিওরভাগ মাঝির বাড়ি এই দ্বীপ-সদৃশ গ্রামগুলোতে।

&nbsp;

ভক্ষনরত জাতী

ভক্ষনরত জাতী

বাকি সবাই খাওয়াতে ব্যাস্ত ছিলো, ছবি তোলার ফাঁকে কখন আমার খাবারের ওপর তারা হামলা করেছে, বুঝতে পারি নি। সব কিছু সামান্য একবার চেখে নিয়ে আবার নৌকার সামনে অবস্থান নিলাম।

মাঝে মাঝে দুইএকবার ক্যামেরার সামনে যাওয়ার সুযোগ হলো। আমি স্বভাবসুলভ ভাবেই ক্যামেরার সামনে ঠিক কিভাবে দাঁড়াতে হয়, ব্যাপারটা আয়ত্ব করতে পারিনি। তাই যতোদুর সম্ভব নিজের চেহারা না দেখিয়ে পার করার চেষ্টা করলাম।

&nbsp;

আঁতেল ইজ ব্যাক

আঁতেল ইজ ব্যাক

এর মাঝে আমরা সবাই যে যার মতো করে কিছু “Larger than Life” ছবি তোলার চেষ্টা করলাম।

একজন ভদ্রমহিলা

একজন ভদ্রমহিলা
একজন ভবিষৎ উকিল
একজন ভবিষৎ উকিল

পাটুলে চলতে চলতে বেশ মজার কিছু জিনিস চোখে পড়বে। পানি সরবরাহকারী লাইনের পিলার, যা নিজেই এখন অর্ধেক পানির নিচে।

পাটুল - ডুবে যাওয়া পানির লাইন

ডুবে যাওয়া পানির লাইন

কিংবা এই স্কুলটার কথাও ধরা যেতে পারে। নির্মানের সময় পানির কথা ভেবে নির্মিত এই স্কুলে, এই সময়টায় যাতায়ত করার একমাত্র উপায় সংলগ্ন একটা বাঁশের সাঁকো। ব্যাপারটা এক দিক দিয়ে বেশ আকর্ষনীয় হলেও, স্কুলের বাচ্চাগুলোর কষ্টটাও ছোট করে দেখার মতো নয়।

&nbsp;

পাটুল - স্কুল

স্কুল

&nbsp;

কিংবা এই ভদ্রলোকের কথা, বুক পর্যন্ত পানিতে নেমে উনি জাল বিছিয়ে চলেছেন মাছের জন্য।

জাল বিছিয়ে চলার পথে

জাল বিছিয়ে চলার পথে

অথবা এই পানির পাম্পটির কথা, গ্রীষ্মকালে যার পানি সরবরাহ করার কথা। এই মূহূর্তে অবশ্য পানির কোন অভাব নেই এর। নিচে ওপরে, কোথাও।

পাটুল - পানির পাম্প

পানির পাম্প

সব মিলিয়ে দেখার অনেক কিছুই আছে পাটুলে। অনেকেই লম্বা সময় নিয়ে যাওয়ার প্লান করেন। ব্যাক্তিগত অভিমতে বিকেলে পাটুল ঘোরা সবচেয়ে ভালো, রোদ এবং আবহওয়া দুয়ে মিলে চমৎকার একটা পরিবেশ। শেষে এসে একটা সূর্যাস্ত দেখার বাসনায় পাটুল থেকে ঘরের ফেরার সময় এসে যায়।

পাটুলে সুর্যান্ত দেখার অপেক্ষায়

পাটুলে সুর্যান্ত দেখার অপেক্ষায়

&nbsp;

চমৎকার একটা দিনের শেষ হয় চমৎকার কিছু স্মৃতি নিয়ে।

দুইজন উকিল এবং একজন আঁতেল

দুইজন উকিল এবং একজন আঁতেল

&nbsp;

# Google Map Direction [ https://goo.gl/b7ZU7S ]