নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বা পারমানবিক বোমা কি, সেটা সম্পর্কে খুব বেশী না জানলেও এই মাল যে এক ব্যাপক বিপদজনক বোমা, এইটা হিরোশিমা/নাগাসাকির পরে আমরা সবাই কমবেশী জানি। মামু এমনি শক্তিশালী, ফাটার সময় আশে পাশে যারা থাকবে, তাগো তো কপাল খারাপ হবেই, প্লাস বংশধর যারা আসতেছে/আসবে, তাদেরও কপাল খারাপ বোনাস হিসাবে। মানূষ মারার উদ্দেশ্যে ইতিহাসে পারমানবিক বোমা মাত্র দুইবারই ফাটানো হইছিলো, তাতেই আম্রিকা মামুর ডরে সব ভচকায়া গেছে, কেউ কিছু কইতে সাহস পায় না। জাপান অবশ্য এখন কইষ্যা রোবট বানাইতেছে, উদ্দেশ্য আম্রিকারে রোবট দিয়া চাপা দিবো [ মনে হয় ]। যাউক গা, আপনি হয়তো জানেনও না, এর পরেও কয়েকবার এমন পরিস্থিতি এসেছিলো, যেখানে সব মিলিয়ে প্রায় ৫৬ কোটি মানূষের মৃত্যু হইতে পারতো [ এবং সেটা শুধু আম্রিকা আংকেল এর একার জন্য ]।
নিউক্লিয়ার দূর্ঘটনা – খায় না মাথায় দেয়?
ধরেন কুনো ভাবে, বাংলাদেশ থেইক্যা আপনি একজন নিউক্লিয়ার ফিজিশিষ্ট হইলেন, টেকা টুকা জোগার কইরা একটা নিউক্লিয়ার বোমাও বানায়ালাইলেন। এমন অবস্থায় একদা আপনার বউ আইস্যা ল্যাবরেটরীতে আপনার লগে কাইজ্জা শুরু করলো, বহুত দিন থেকে বাড়িতে যান না, হের লাইগ্যা। ঝগড়ার এক পর্যায়ে, সে তার ভ্যানিটি ব্যাগ ছুঁড়ে মারলো আপনার সাধের বোমার দিকে, বোমার লাগলো বাড়ি, ব্যাস, বোমা ফুট্টুস, আপনে আর আপনার বউ ইতিহাস [ স্বর্নাক্ষরে নাম লিখবো না এইটা গ্যারান্টি, বছর বছর জুতার মালা পাইতে পারেন বড়জোর ]। এইটারে কয় নিউক্লিয়ার দূর্ঘটনা। যার মানে হলো, আমার সাধের বোম কোন ভুলের কারনে ফুট ফুট ফট্টাস হইয়া গেছে।
এই পর্যন্ত শুধু মাত্র আম্রিকা আংকেলের একার পারমানবিক দূর্ঘটনা ঘটছে ৩২ টা, ১৯৪৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত, যার মধ্যে ছয়টা পারমানবিক বোমা আজীবনের জন্য হারায়ে গেছে, হারিকেন দিয়া খুঁইজাও আম্রিকা আংকেল ঐগুলা পায় নাই আজ পর্যন্ত। যার মধ্যে তিনটা আছে আটলান্টিক মহাসাগরের প্যাটের মধ্যে। আর দুইটা কেডা লুকাইছে কেডা জানে ! [ আর একটা বোমার কেচ্ছা কাহিনীর উপ্রে আম্রিকা আংকেল টপ সিক্রেট সিল লাগায়া রাখছে, ঐটা কই গেছে, কেউ জানে না ] আম্রিকা অবশ্য চামের উপ্রে কয় রাশিয়া কাকা চুরি করছে ঐটা ! ভালো কথা, এই ৩২ টা দূর্ঘটনায় প্রান দিছে ৮১ জন ( মতান্তরে ৯৬ জন, ১৫ জন কই গেছে আম্রিকা আংকেল কিছু কয় নাই, হেগো বাড়িতে ব্যাগ ভর্তি টেহা থুক্কু ডলার পাঠায়া দিছিলো )।
সব গুলার ব্যাপারে জানার সুযোগ পাইনাই, সারা রাত জাইগ্যা জাইগ্যা কয়েকটার ব্যাপারে জানলাম। এখন জাতীর উদ্দেশ্য লিখতে শূরু করছি।
এই সব দূর্ঘটনা কবলিত পারমানবিক বোমারে আদর কইরা ডাকা হয়, Broken Arrow, ভাঙ্গা তীর।
[ সিরিয়ালী সাজাই নাই, সবাই যা করবে, আমিও তাই করুম নাকি? ]
প্রথম কাহিনী, ১৯৬৫, ডিসেম্বর মাসের পাঁচ তারিখ, আম্রিকা আংকেলের এক বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজে অবতরন করতে যাইতেছে একটা A-4 SKYHAWK. ১৯৫৬ সাল থেকেই আম্রিকার নৌবাহিনীর পাইলটদের সেরা পছন্দের একটা, খুব কামের জিনিস ছিলো নাকি। [ আমি দেখিনাই, শিওর না ] যাউক গা, একটা আস্ত নিউক্লিয়ার বোমা নিয়া বিমানটা ল্যান্ড করতে যাইতেছিলো, পাইলটের মনে লয় ঘুম পাইছিলো, পিচ্চি রানওয়ে পার হইয়া যাইতেছে, ব্রেক করনের নাম নাই, পেলেন সোজা গিয়া পানিতে। অবশ্য টেকনিশিয়ানরা বলে, ল্যান্ডিং এয়ারক্রাফটের ব্রেকের জন্য ব্যবহৃত গ্যাস পেডেল সময় মতো গ্যাস রিলিজ না করার কারনে প্লেনটার গতি কমে নি, ফলে রানওয়ে পার করে এলিভেটর এর গার্ডার ভেঙ্গে নিচে পড়ে যায়। নগদে সব গুলা দৌড় দিছে প্লেনের দিকে। মাগার পেলেন, পাইলট আর বোমা, কোনটারেই তখন খুইজ্জা পাওয়া যায় নাই। এখনো অবশ্য পাওয়া যায় নাই।
দুই নম্বর ঘটনা, ফেয়ারফিল্ড-সুসাইন এয়ার ফোর্স বেস, ১৯৬০, অগাষ্টের ৫ তারিখ, পারমানবিক বোমা নিয়া উড়ার সময় রানওয়েতে একটা B-29 SUPERFORTRESS প্লেনে কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পরে এবং প্লেনটি কিছু সময় পড়েই ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং করে। এবং সেইখানেও পাইলট মুনে লয় ঝিমাইতেছিলো, প্লেনটা ক্রাশ করে। অবশ্য তখনো কিছু হয়নাই, ফাইট্যা ফুইটা গেছিলো হালকা পাতলা, ঘটনা ঘটে এর পরে। দমকল কর্মীরা আর পারমানবিক বোমা এক্সপার্টরা লুঙ্গিতে গিট্টু দিয়া দৌড়া মারে পেলেনের দিকে। যখন সবার মনোযোগ ছিলো প্লেনের ক্রুদের উদ্ধারের দিকে, ঠিক সেই সময়, প্রচন্ড এক বিস্ফোরন। পারমানবিক বোমা ফুইট্টা গেলো। নগদে ১৯ জন মারা গেলো, তার মধ্যে একজন জেনারেলও ছিলো। পুরো দোষটাই ছিলো ষ্ট্যাটেজিক এয়ার কমান্ড নামের সেই সময়কার একটা এয়ার ফোর্স কমান্ড সেন্ট্রালের। কেন, পড়ে বলতেছি।
তিন নম্বর ঘটনা, ১৯৫০, এপ্রিল মাসের ১১ তারিখ,আম্রিকার একটা এয়ারফোর্স বেজ + ওয়েপন ডিপো, এইখানেও ঘটনা একটা B-29 রে নিয়া। এয়ার বেজ থেকে উড্ডয়ন এর পর, পাশের এক পাহাড়ের ওপর বিদ্ধস্ত হয় প্লেনটা। প্লেনে একটা নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ছিলো, ছিলো ৬ জন ক্রু, বিদ্ধস্ত হওয়ার পরে ক্রুদের কারো লাশ ঠিকভাবে পাওয়া যায়নি, পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিলো, পারমানবিক বোমাটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো, তবে ভাগ্যক্রমে রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায় নাই। এইটার দোষও ষ্ট্যাটেজিক এয়ার কমান্ড এর।
চার নম্বর ঘটনা, ১৯৬০, জুনের ৭ তারিখ ম্যাকগুয়ার এয়ারফোর্স বেজ, নিউ জার্সি, শত্রুপক্ষের বিমান ধ্বংসের জন্য এবং প্রয়োজনে পারমানবিক হামলা চালানোর জন্য বো-মার্ক নামের এক ধরনের সারফেস টু এয়ার মিসাইল তৈরী করা হয়, আকারে ফাইটার জেটের মতো। শব্দের চেয়ে তিন গুন বেশি গতি সম্পন্ন এই মিসাইল। উল্লেখ্য দিনে, পারমানবিক বোমা সহ এমনি একটি বোমার্ক টেষ্ট করা হচ্ছিলো। মিসাইল টাকে উড়ানোর জন্য ব্যবহার হওয়া হিলিয়াম গ্যাসের একটা ট্যাংক বুম করিয়া ফাটিয়া যায়, ফলশ্রুতিতে মিসাইল এর ফুয়েল ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বুম। তবে পারমানবিক বোমা টা ফাটে নাই, তবে রেডিয়েশন চারেদিকে ছড়ায়ে পড়ছিলো আগুনের কারনে। নিহত, ১।
পাঁচ নম্বর ঘটনা, সময় জানা নাই, আমেরিকার এক এয়ার বেজ থেকে অন্য এয়ার বেজে একটা পারমানবিক বোমা বহন করছিলো একটা B-36 PEACEMAKER বোম্বার। [ হালার মাইন্যষের উপ্রে বোম ফেলে, আবার নাম রাখছে পিসমেকার, কুন টাইপের আবাল ] উড়ার এক পর্যায়ে, এক ক্রু যায় বোমার সেফটি অন করতে গেলে, সে প্রচন্ড বিষ্ময়ের সাথে লক্ষ করে, নিচের র্যাম্প খুলে বোমাটি উড়ন্ত প্লেন থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছে। বোমাটি মাটিতে আঘাত করলে বোমার প্রাইমারী এক্সপ্লোসিভ টা ডেটোনেট হয়, এবং সেই বিস্ফোরনে ছিটকে পড়া পাথরের আঘাতে একটা গরু মারা যায়। মজার ব্যাপার হলো, এই বোমাটি ছিলো আমেরিকার ইতিহাসে তৈরী সবচেয়ে শক্তিশালী পারমানবিক বোমা, ২০ মেগাটনের। যেখানে পুরা একটা শহর তামা তামা হইতে পারতো, সেখানে সব এক গরুর উপ্রে দিয়াই গেছে।
আজকে এই পাঁচটাই জানেন। কাল পরশু আবার লিখবো।
ষ্ট্যাটেজিক এয়ার কমান্ড এর দোষ
১৯৪৯ এ রাশিয়া পারমানবিক বোমা টেষ্ট করার পর থেকেই আম্রিকা ষ্ট্যাটেজিক এয়ার কমান্ড রে দ্বায়িত্ব দেয়, এই ঝামেলা সামলানোর। ফলে তারা ১২ টা B-29 বিমানে ২ টা করে পারমানবিক বোমা তুইলা দিয়া সারাদিন আম্রিকার অধিকারে থাকা এলাকা টহল দিতে পাঠায়, উদ্দেশ্য, রাশিয়া যদি আম্রিকার উপ্রে বোম মারে, তাইলে এই পেলেন মস্কো গিয়া ফাটাইয়ালাইবো। আর এই স্পেশাল প্লেন স্কোয়াড্রন সবচেয়ে বেশি পারমানবিক দূর্ঘটনা ঘটিয়েছে, ৫ টা। এবং তাতে ৪৯ জন মৃত্যুবরন করছে। আরে বেটা এতো কাহিনী না কইরা ক্রেমলিনের তলায় একটা রিমোটকন্ট্রোল বোম বসায়ে দিতি, রাশিয়া কাহিনী করলেই ফুট্টুস। উজবুকের দল।