< Go Back Home

আঁতেল আমি যে প্রেমে পড়েছি – ভালোবাসার গল্প

আমি স্বভাব গত ভাবেই একটু বাউন্ডুলে।সারা দিন ঘুরে বেরানো,আড্ডা দেয়া,সিগারেট খাওয়া আর কম্পিউটার এর সামনে বসে দিন কেটে যায় আমার। মজার ব্যাপার হলো বন্ধুদের সাথে আড্ডা হয় কম্পিউটার, নেট স্পিড,ডাউনলোড এসব নিয়ে।মানবীয় কোন আলোচনা হয় না আমাদের মধ্যে।কিন্তু হটাৎ করেই কেমন যেন মানবীয় হয়ে যাই আমি,কারন ও।আচ্ছা,ও টা কে সেটা পরে বলছি।

ওর সাথে প্রথম দেখা হয় বৈশাখী উযযাপন অনুষ্টান এ। রমনা তে গেছি দল বল নিয়ে,মানে বন্ধু গ্রুপ নিয়ে।অনুষ্টান দেখা বাদ দিয়ে ফোনের সফটওয়্যার নিয়ে কথা বলতে ব্যাস্ত।আমরা অবশ্য আতেল গ্রুপ। মেয়েদের টিজ করা কিংবা মেয়েদের পেছনে দৌড়ে বেড়ানো এ সব আমাদের দিয়ে হবেনা। তারপর ও আমাদের গ্রুপের একজন প্রেম করছে,আর আমরা সেটা নিয়ে গবেষনা করছি। যাই হোক,কথায় কথায় হটাৎ মাহিন বলল “দোস্ত,তোর ফোনে এইটা কার ছবি রে?” আমি বললাম “কই”।,আমার ফোন ওর হাতে ছিলো।ও একটা ছবি দেখালো।আমি অবাক হলাম।কে এই মেয়ে,চিনি না জানিনা।

আমার ফোনে ছবি আসলো কোথা থেকে। কার ছবি এটা জানা বাদ দিয়ে আমরা আতেল পরিষদ গবেষনা করতে বসলাম। একেক জনের একেক মতামত।একজন বলে তোর ফোনের ব্লুটুথ অন ছিলো। হ্যাকিং সফট এর মাধ্যমে কেউ পাঠিয়েছে।আরেকজন বলে নেট থেকে কোন ম্যালওয়্যার ঢুকেছে। হটাত রবি বলল “দোস্ত দেখি তো মেয়েটাকে পাওয়া যায় কিনা?” তখন হটাৎ কি মনে করে ছবিটার ব্যাকগ্রাউন্ডে নজর দিলাম। আবিস্কার করলাম ছবিটা রমনার। পেছনে জনসমুদ্র দেখা যাচ্ছে। আমি বললাম “তোর আসেপাশে দেখতো।ছবিটা এখান কার ই।সম্ভবত কিছুক্ষন আগে তোলা”।

সবাই চারিপাশে দেখতে লাগলো। শুধু রবি বাদে। সে দেখি তার ফোন বের করে কি যেন করছে। একটু পর রবি বলল পাওয়া গেছে। ফোন টা এগিয়ে দিলো আমার দিকে।সবাই হুমড়ি খেয়ে পরলাম ফোনের উপর। স্ক্রিনে সেই ছবিটা দেখা যাচ্ছে। ম্যাটল্যাবে ইমেজ সার্চ দিয়ে রবি বের করেছে। সবাই এক দফা “বাহবা” দিলাম ওকে। দেখলাম মেয়েটার নাম অনীতা।

নুসরাত জাহান অনীতা। ফেসবুকে তার অ্যাকাউন্টে ঠিক এই ছবিটাই প্রোফাইল পিকচার দেয়া আছে। কেন যেন নিজেকে সম্মহিত মনে হলো। মেয়েটার ছবির দিকে তাকিয়ে আছি অনেক্ষন ধরে। হটাৎ দেখি আবীর গান ধরেছে “আমি তো প্রেমে পরিনি,প্রেম আমার উপরে পরেছে”।

আমি বললাম “চুপ কর,কোথাকার কে চিনি না জানিনা। প্রেমে পরে গেছি!আজব সব কথা বলিস তোরা”।
মুখে তো বললাম কিন্তু বাসায় ফেরার পর ও মন পরে রইলো অই ছবিটাতে ।ফেসবুকে গিয়ে খুজে বের করলাম। কিছুক্ষন প্রোফাইল টা দেখলাম। তারপর সাত পাঁচ ভেবে দিলাম ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট।পিসি অন রেখেই আমি গেলাম আম্মুর ঘর এ। সেখানে একটা ড্রয়ারে আমার সব ডিস্ক গুলো আছে।ফিরে এসে দেখি নোটিফিকেশন। ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট এক্সেপ্টেড।অবাক হলাম। মনে হলো সে যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।

চ্যাটে নক করলাম। করার পর আমি নিজেই অবাক হলাম। আমি কোন মেয়ে কে চ্যাটে নক করলাম? আজ কি হয়েছে আমার? এমন তো কোনদিন করিনি। সে জবাব দিলো। অনেক্ষন কথা হলো। প্রথম বার কোন মেয়ের সাথে কথা বলে এতো ভালো লাগলো।
নিজের অজান্তেই মনের মধ্যে কিসের জানা পাখা মেলার আওয়াজ পেলাম। নিজেকে শাঁসালাম “কি হচ্ছে এ সব?অচেনা একটা মেয়ে কে নিয়ে কি চিন্তা করছি আমি,ফোকাস,ফোকাস”।
কিন্তু লাভ হলো না।

আমি সাধারনত সারা রাত জেগে থাকি।নেটে আড্ডা দেই,ডাউনলোড দেই,গেম খেলি। সেরাতে কি হলো জানি না ।১২ টা বাজতেই নিশাচর আমার ঘুম পেতে লাগলো। একটা পর্যন্ত সহ্য করলাম ।তার পর পিসির চেয়ারেই ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম ভাঙ্গলো আম্মুর ডাকে। বকা দিচ্ছে যাই হোক উঠতে গিয়ে অনুভব করলাম ঘাড়ে অনেক ব্যাথা। ফ্রেস হয়ে হাতে চায়ের মগ নিয়ে পিসি অন করে ফেসবুকে ঢুকতেই মাথা হ্যাং হয়ে গেলো। একটা মেইল। অনীতা দিয়েছে।সেটা অস্বাভাবিক কিছু না। অস্বাভাবিক হলো মেইলের লেখাটা। একটা লাইন লেখা বাংলিশ এ “এভাবে পিসির সামনে কেউ ঘুমায় নাকি?”

মাথা তো অফলাইন মূডে চলে গেলো। বলে কি মেয়ে? জানলো কিভাবে আমি পিসির সামনে ঘুমাই? আম্মু কে ডাকলাম “মা সকালে বাসায় কেউ এসেছিলো? আমি ওঠার আগে?
মা বল্লো “নাহ”।
হাতে চায়ের মগ নিয়ে বারান্দায় এলাম।মাথার চিন্তার ঝড় উঠেছে।আমি চিন্তা করছি আমার পিসি হ্যাক হয়নি তো? কেউ কি ওয়েব ক্যাম দিয়ে দেখেছে? আমি বারান্দা দিয়ে সামনে তাকিয়েছিলাম।একটা ৫ তলা বাসায় দিকে।তখনই রহস্য বের হলো।
আমি নিজেকে গাধা থেকে শুরু করে গোটা বিশেক গাল দিলাম। সব সময় টেকি চিন্তা করতে করতে নরমাল চিন্তা ভবনা গুলিয়ে ফেলেছি।তাই ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি।

ছোট বোনের রুমে গেলাম।দেখি কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছে,এখন সাজগোজ পর্ব চলছে। লিপষ্টীক দিচ্ছে। জানি কার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। বয়ফ্রেন্ড।ছেলেটাকে চিনি,ভালো ছেলে। তাই কিছু বলি না।এগিয়ে গিয়ে কান ধরলাম ওর।আচমকা টানে মিতির লিপষ্টিক ঠোটের ওপর দিয়ে না ইয়ে গালের ওপর দিয়ে রওনা দিলো। সাথে সাথে চেঁচিয়ে ঊথলো “আম্মু দেখো ভাইয়া আমাকে মারছে”।
আমি মহাকাশ থেকে পরলাম।

কান টানা কবে থেকে মার বলে স্বীকৃতি পেলো? যতোদূর জানা আছে সংসদ এ তো এমন কোন বিল পাশ হয়নি। আমি মুখ চেপে ধরে বললাম “এতো চিল্লাস কেন?আগে কথা শোন। আমার একটা কাজ করে দিতে হবে” ।
সোজা বলল পারবো না। আমি বললাম “তাহলে আমি তোর আর অভীকের বিষয়টাও আম্মার কাছে গোপন রাখতে পারবোনা”।
এক্কেবারে জায়গা মতো লেগে গেলো। কাঁদো কাঁদো চেহারা করে বলোও “কি করতে হবে?”।
আমি ওকে বুঝিয়ে বললাম।

ঘরে ফিরে এলাম। এবার অপেক্ষার পালা। বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হলো না। মিনিট ২০ পরেই দেখলাম মোবাইল বেজে উঠলো। ডিসপ্লেতে অজানা নম্বর। ফোন ধরলাম।অপর পাশ থেকে একটা উৎকন্ঠিত কন্ঠ পেলাম। “আপনি নাকি অসুস্থ?” আমি মনে মনে এক চোট হেসে নিলাম “হুম,অনেক অসুস্থ”।
কন্ঠের উৎকন্ঠা যেন আরো বেড়ে গেলো ।“কি হয়েছে আপনার?” আমি বললাম “হাইপোকন্ড্রিয়াক”।
অপর পাশ থেকে আঁতেকে ওঠার শব্দ পেলাম

“এটা কি?” আমি বললাম “অনেক বড় অসুখ।“ আসলে হাইপোকন্ড্রিয়াক একটা মেডিক্যাল টার্ম যার ব্যবহার্য মানে হলো এমন ব্যাক্তি যার কোন অসুখ নাই কিন্তু সে মনে করে সে অনেক অসুস্থ। কিন্তু আমি ভালো করেই জানতাম অপর পাশের সেই রহস্য কন্য সে ব্যাপারটি জানেনা। আবার ওপর পাশ থেকে বলল “এ রোগে কি কি হয়?” আমি বললাম “বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যায়,আমি মনে হয় বেশি দিন বাচঁবো না।“ অপর পাশ থেকে ফোঁপানোর আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম বরশি মাছের মুখের মধ্যে ঢূকেছে। এবার বললাম “আমাকে একবার দেখবেনা ?”অপর পাশ থেকে বলল “আপনাকে তো আমি রোজ দেখি জা….” বলেই চুপ করে গেলো।আমি শব্দ করে হেসে উঠালাম।ওপাশ থেকে লাইন কেটে দিলো।আমার মুখে তখন বিজয়ীর হাসি।

আরো প্রায় ২ ঘন্টা পর বোন বাসায় ফিরলো। ওকে সব বল্লাম। শুনে দুই ভাই বোন এক চোট হাসলাম। তার পর ওকে বললাম “ছবিটা কেন দিলি?”ও বলল” কি করবো বল ভাইয়া? কেউ যদি দিন রাত ২৪ ঘন্টা আমার ভাই এর ধ্যান করে,তার জন্য এতোটুকু তো না করে পাছি না”।, বললাম “মাহিন কে দলে ভিরালী কিভাবে?”।, সব বলল মিতি।

সার সংক্ষেপ হলো মিতির বান্ধবী অনীতা আমাকে প্রায় ১ বছর ধরে ভালোবাসে।কিন্তু আমাকে বলতে সাহস পায়নি।আমাদের বাসায় ঠিক উলটো পাসেই থাকে ওরা।আমার রুমের বারান্দা থেকে অনীতার রুম দেখা যায়। কিন্তু আমি সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে এতো ব্যাস্ত থাকতাম বেচারী কে কখনো ভালো করে দেখিনি।সে সবসময় আমার অ্যাটেনশন পাবার জন্য মরিয়া হয়ে থাকতো। কিন্তু আমি খেয়াল করতাম না।

এর পর আমার ফাজিল বোন তার মাথায় বুদ্ধি দেয়। আমার বোন,আমার ফ্রেন্ড মাহিন যে ফোনে ছবিটা আবিস্কার করে সে এবং অনীতা একটা জোট গঠন করে। পরে অনীতা তার বৈশাখী মেলায় আমাদের আশে পাশেই ছিলো। সে একটা ছবি তুলে মাহিন এর ফোনে এম এম এস করে ।মাহিন আবার ব্লুটুথ দিয়ে আমার ফোনে দেয় ।সে জন্যই মাহিন সে দিন আগে ভাগে আমার কাছ থেকে ফোন নিয়েছিলো ।পরে রবি তাকে খুজে বের করে। অনীতা রোজ তার রুমের জানালায় বসে বাইনোকুলার এ আমাকে দেখতো। সকালে চায়ের মগ হাতে নিয়ে বারান্দায় যেতেই দেখি অপর পাশের একটা বাড়ির জানালার ভেতর থেকে কিছু একটা ঝিলিক দিচ্ছে।

সাথে সাথে বুঝলাম বাইনোকুলার,আর পরে আমার মনে পরলো আমার বোনের বান্ধবী থাকে ওই বাসায়। দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে নিয়ে এবার আমি শিকার থেকে শিকারী হলাম।বোনকে বললাম তার বান্ধবী কে ফোন করে জানাতে যে আমি অনেক অসুস্থ। সাথে সাথে ফিরতি ফোন পেলাম। তার পর থেকে অনীতার সাথে নিয়মিত কথা হতে লাগলো।কোন মেয়ে যে আমার মতো আঁতেলে কে এতো ভালোবাসতে পারে জানা ছিলো না।একদিন সাহস করে ও আমাকে প্রোপোজ করলো। আমি কিছুক্ষন টম এন্ড জেরী খেললাম ওর সাথে। তারপর জবাব দিলাম।

তারপর থেকে দুইজন এক সাথে আছে।পরে অবশ্য জেনেছিলাম মাহিন কেন ওদের হেল্প করেছিলো। অনীতার খালাতো বোনের পেছনে অনেক দিন থেকে ঘুরছে মাহিন। নিজের রাস্তা সহজ করার জন্য অনীতা কে হেল্প করেছিলো।

তার পর থেকেই সীমাহীন ভালোবাসা আর একটুকরো সপ্ন।আঁতেল আমি যে প্রেম এ পরেছি।

// অরিত্র আহমেদ &#8211; ভালোবাসার গল্প