ঈদের পোষাকে রবি’র শিশুদের অপমান
ক্যাম্পাসে নতুন ভর্তি, সবাই নতুন মুখ। এর মধ্যে যারা একটু চালু ধরনের, তারা ধিরে ধিরে সবার সাথে বন্ধুত্ব করে নিতে লাগলো। কিন্তু যারা একটু চুপচাপ টাইপের, তারা বসে রইলো এক কোনায়। নিজের মধ্যে। ঠিক সেখানে, চমক নিয়ে এলো কোকাকোলা। তারা ক্যাম্পাসে একটি ভেন্ডিং মেশিন বসালো, সেখানে প্রতিটা কোকের বোতলের ক্যাপ স্পেশাল ভাবে ডিজাইন করা। আপনি চাইলেও সেটি নিজে থেকে খুলতে পারবেন না। সেটি খুলতে গেলে আপনার আরেকটি কোকের বোতল লাগবে, মানে অন্য একজন কোক বোতল ক্রেতার বোতলের সাথে আটকিয়ে আপনার বোতলের মুখ খুলতে হবে। এতে করে, যারা একা একা বসে ছিলো, তাদেরও কোক খাওয়ার জন্য অন্য একজনের সাথে কথা বলতে হবে। এভাবে পরিস্থিতিটা হালকা হবে, সবাই সবার সাথে পরিচিত হবে। আর যারা একটু খাদক টাইপের, তাদের ফ্রেন্ডের আর অভাব হবে না। ঘটনাটা প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে করেছিলো কোকাকোলা।
মধ্যপ্রাচ্চ্যে যেসব শ্রমিকরা থাকে, তাদের মতো মানবেতর জীবন যাপন খুব কম যায়গায় লোকই করে। একটা ছোট্ট ঘরে ১০-১২ জন গাদা গাদি করে ঘুমাচ্ছে, বছরের পর বছর দেশে যেতে পারছে না, পরিবারের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে প্রতি মাসেই বেতনের বড় একটা অংশ চলে যায়। ফলে টাকা বাঁচানোর জন্য অনেকে মাসে একবারও কথা বলেন না। কোকাকোলা সেখানে বসালো স্পেশাল এক বুথ। ফোন বুথ। এই ফোন বুথে কয়েন বা কলিং কার্ডের বদলে লাগে কোকের বোতলের ক্যাপ। একটি ক্যাপ দিয়ে আপনি তিন মিনিট কথা বলতে পারবেন আপনার দেশে। সেই বুথ থেকে প্রায় ৪১ টি দেশে কথা বলা যায় তিন মিনিট করে একটি ক্যাপ দিয়ে। কোকের দামও এক পয়সাও বাড়েনি।
উপরের দুইটি একই সাথে মার্কেটিং ষ্ট্যান্ট, ব্যবস্থা বৃদ্ধির উপায়, সেই থাকে ভালো কিছু করার প্রয়াস।
এবার আসি দেশে। রবি সবাইকে জানালো ৫৮ টাকা রিচার্জ করলে সেই টাকা দিয়ে তারা পথ শিশুদের ঈদের পোষাক কিনে দেবে। আমার বাসার নিচে একটা রিচার্জ শপ আছে, সেখানে আমার সামনেই কয়েকজন ৫৮ টাকা রিচার্জ করেছে। এরপর আমরা কি দেখলাম? কি দেখলাম তাতে পরে আসছি।
ঈদের জামা বলতে আমরা কি বুঝি? জেনারেল সেন্সে, ছেলেদের ক্ষেত্রে একটা প্যান্ট, একটা শার্ট, মেয়েদের ক্ষেত্রে পায়জামা, কামিজ আর ওড়না। যায়গা ভেদে বা ক্ষেত্রে ভেদে পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু জেনারেল আইডিয়াটা এমনই।
রবি দেখলাম পথ শিশুদের মাঝে কিছু জামাকাপড় বিতরন করেছে। ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবী এবং পায়জামা। মেয়েদের জন্য কামিজ এবং পায়জামা। বিষ্ময়কর বিষয় হলো, পায়জামা গুলো সব সাদা, আর জামা গুলো সব রবির অফিশিয়াল কালার এর, এবং সেখানে বেশ বড় করে রবির ব্র্যান্ডিং করা। নিজেদের প্রচারনা করার এর চেয়ে নির্লজ্জ প্রয়াস এর আগে কখনো দেখিনাই আমি। রবির ঐ ড্রেস গুলো দেওয়ার জন্য তারা ডেকে এনেছেন দেশের মিডিয়া জগতের বড় বড় সেলিব্রিটিদের। এই সেলিব্রিটিদের পেছনে যতো টাকা ঢেলেছে রবি, সেই টাকায় যদি সাধারন বাজার থেকে কিছু জামা কাপড় কিনে বাচ্চাদের মাঝে বিতরন করতো, ব্যাপারটা অনেকটাই সুন্দর দেখাতো।
আমি জানিনা কার কাছে কি মনে হয়েছে, কিন্তু ঐ জামা গুলো দেখে আমার মনে একটাই কথা এসেছে, ঐ বাচ্চাগুলো যখন ঐ জামা পড়ে বের হবে, সবাই তাদের আলাদা ভাবে দেখবে, ঐ জামা দেখে সবাই তাদের পথ শিশু হিসাবে চিহ্নিত করবে, তারা সবার চোখে একজন পথ শিশুর সম্মান ভালোবাসাটাই পাবে, একজন সাধারন শিশুর সম্মান বা ভালোবাসা পাবে না।
রবির বিরুদ্ধে এর আগে শ্রমিক নির্যাতন, কর ফাঁকি, বেতন বকেয়া সহ নানা অভিযোগ ছিলো, সেই লিষ্টে প্রমানিত ভাবে একদল শিশুকে অপমান করার বিষয়টা যোগ হলো।