ওয়ার্ল্ড, টেক অ্যা বাউ
মাশরাফি নামক এই পাগল যতদিন দলে আছে, ততদিন কোন চিন্তা নেই বাংলাদেশের। অ্যাকসিডেন্ট করে, চামড়া ছিলে, একের পর এক সার্জারির মধ্যে দিয়ে গিয়ে, মাসের পর মাস মাঠের বাহিরে থেকে খেলার সময় যখন জান প্রাণ দিয়ে আক্রমণ করে, তখন বিশ্বকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলতে হয়, টেক অ্যা বাউ, এরা হল বাংলা মায়ের দামাল ছেলে। এরা ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে।
সাকিব আল হাসান কে? সাকিব আল হাসান ক্রিস গেইলের মতো পেটানো বডি ওয়ালা কেউ নন। ব্রেট লির মতো ম্যাগনেট ট্রেনের গতিতে বলও করেন না। কিংবা হার্সেল গিবসের মতো বলে বলে চার-ছক্কা মারেন না। তাহলে কেউ এই সাকিব আল হাসান? সাকিব আল হাসান হল ঠান্ডা মাথার একজন নির্ভরযোগ্য খেলোয়ার। কখনোই উত্তেজিত নয়, কখনই মাথা গরম করে না। দলের দরকারের সময় ধীরে ধীরে খেলে যায়। এখন খেলা শেষে যখন মাঠে থেকে বের হয়ে যায়, তখন সবাইকে চিৎকার করে বলতে হয়, There, walking in the field, the man who stand his ground, kept the emotion in check and made history.
তাসকিন পিছি একটা ছেলে। বয়সে আমারও ছোট। প্রথম ম্যাচ থেকেই বাঙ্গালী ললনাদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে একের পর এক ম্যাচ খেলে গেছে, বল করে গেছে আপন গতিতে। একের পর এক প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়েছে অপজিশন এর ব্যাটসম্যানদের। ম্যারি মি আফ্রিদি থেকে ম্যারি মি তাসকিন এ যেতে সময় লেগেছে একজন তাসকিনের মাঠে আসার।
মুশফিকুর রহিম, সাইজে ছোট, কাঁধে অনেক বড় বড় দ্বায়িত্ব নিয়ে নির্ভরযোগ্য একজন খেলোয়াড়। উইকেটের পেছনের মাঠ শাসন করা থেকে চিৎকার করে বোলারদের উৎসাহ দেওয়া, কিংবা ব্যাট হাতে নিয়ে প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙ্গে একের পর এক রান বের করে ওস্তাদ এই মানুষটার মুখে সব সময় বাচ্চা সুলভ একটা হাসি। কখনোই যেন বড় হবেন না, কখনোই যেন প্রতিপক্ষকে ধোলাই করতে ছাড় দেবেন না।
মোস্তাফিজ, আজকেই শুরু করেছে। প্রথম ভারতের বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যানদের শলাকার মতো ধরেছে আর ঘরে ফেরত পাঠিয়েছে। সামনে যে আরও অনেক কিছুই দেখাবে সে, আজকে তার এক ঝলক গোটা জাতিকে দেখিয়ে দিয়েছে। প্রথম ম্যাচেই পাঁচটা উইকেট পকেটে তুলে নিয়েছে, দেখিয়ে দিয়েছে, মওকা দিয়ে কিছু হয়না, খেলতে হলে খেলতে হয়।
এরা আমাদের টাইগার। এরা আমাদের অকৃত্রিম ভালোবাসার দেওয়াল। যখন দেওয়াল ভেঙ্গে গেছে, আমাদের চোখের পানির সাথে তাদের চোখের পানি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। যখন দেওয়াল শত আঘাতেও ঠায় দাঁড়িয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে, তখন আমরা চিৎকার করেছি, তারাও চিৎকার করেছে। আর এই দলটার কারণেই, কোটি মানুষ সব কিছু ফেলে দিয়ে, শ্বাস চেপে ধরে টিভি স্ক্রিনের সামনে বসে ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারণ আমাদের ভালোবাসা দিয়ে গড়া এই দল।