নিরাপদ সড়ক চাই – গুজব বনাম ফ্যাক্টস
আজকে কি কি হয়েছে, আসুন পর্যালোচনা করি।
– রোজকার মতো শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিলো।
– দুপুরের নামাজ এর পরে তাদের কিছু লোক এসে বলে, তাদের কয়েকজনকে ধরে নিয়ে ধানমন্ডীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছে, সেখানে ৪ জন মেয়ে আছে, যাদের ধর্ষন করা হচ্ছে ।
– শিক্ষার্থীরা এই খবর শুনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর অফিসের দিকে যেতে থাকে, ছাত্রলীগ তাদের বাধা দেয়।
– এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ তাদের ধাওয়া করে, এরপর সংঘর্ষ শুরু হয়।
– বিকেল ৪ টায় অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ ফেসবুকে লাইভে এসে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান ঝিগাতলায় একজন ছাত্রের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে, দুইজন নিহত।
– এই খবর প্রকাশ হবার পর পরেই আরো অনেকগুলো লাইভ ব্রডকাষ্ট হয় ফেসবুকে, অনেকেই এসে নানা ধরনের খবর দিতে থাকে, এর মধ্যে ৪ জন ছাত্র খুন ও ৪ জন মেয়েকে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষন করা হয়েছে, অন্যতম।
– আম্বালা ইনের সামনে হেলমেট পড়া একদল যুবকের সাথে শিক্ষার্থীদের আরেকদফা সংঘর্ষ হয়, তারা ছাত্রছাত্রীদের ওপর ইট পাটকেট ছুড়তে থাকে, তাদের মধ্যে একাধিকজন অস্ত্র বের করে গুলি চালায়।
– ষ্টার এর সামনে দুইটা বাইক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে পুলিশ থাকলেও তারা কোন ধরনের একশন নেয়নি।
– সন্ধ্যার আগে আগে আবার ছাত্রছাত্রীরা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয় এর দিকে আগাতে থাকলে কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মী কার্যালয় থেকে বের হয়ে এসে ছাত্রছাত্রীদের ভেতরে যাওয়ার আহবান জানান।
– ভেতরে ঘুরে এসে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সামনে ছাত্রছাত্রীরা জানায়, তারা গুজব শুনে উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে আসছিলো। তারা কার্যালয় ঘুরে এসে দেখেছে গুজব মিথ্যা ছিলো।
– কোন একটা লেকে একজন ছাত্রীর লাশ পাওয়া গেছে বলে আরেকটা গুজব দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে।
– আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক ষ্ট্যাটাস দিয়েছেন ঝিগাতলাতে কোন সংঘর্ষই হয়নি ! উনি কই ছিলেন পুরো টাইম উনিই ভালো জানেন!
ফ্যাক্টসঃ
– এই মূহুর্তে সারাদেশে বা দেশের প্রধান জায়গাগুলোতে সব মোবাইল অপারেটর এর থ্রিজি ও ফোরজি সার্ভিস বন্ধ, টুজি সার্ভিস চলছে। সরকারী নির্দেশে এমন করা হয়েছে।
– বিএনপি নেতা আমীর খসরুর একটা অডিও ক্লিপ ফেসবুকে ভাইরাল, সেখানে সবাইকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামায়ে দিতে বলা হয়।
– সাধারন ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই আহত, ৯ জনের কথা বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গেলেও হাসপাতাল সূত্রমতে ৩০-৪০ জন আহত।
– কোন ছাত্রের চোখ তুলে নেওয়া হয়নি, তবে একাধিক ছাত্র চোখে মারাত্নক ভাবে আঘাত পেয়েছেন।
– কোন ছাত্রীকে রেপ করা হয়নি, তবে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে, কোন ভ্যারিফায়েবল সোর্স নেই।
– তেজগাঁতে একজন শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বাসার ভেতর থেকে, আন্দোলনের সাথে এর কোন সম্পৃক্ততা নেই। [ সোর্স কমেন্টে ] – আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের এর ভাষ্য অনুযায়ী, সভানেত্রীর কার্যালয়ে যারা হামলা করেছিলো, তারা সাধারন ছাত্র ছাত্রী ছিলোনা, এবং সেই হামলায় ১৭ জন আহত হয়েছে।
যা যা বললাম, প্রতিটা কথার সোর্স কমেন্টে। এই কারনেই সারাদিন চুপ ছিলাম আর মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম, এই গুজব গুলো যেন সত্য না হয়, নয়তো বাংলাদেশের পতনের শুরু এখানেই হবে।
এবার আসি আমার নিজের বক্তব্যে। ছাত্র ছাত্রীদের ওপর হামলা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না, সাফ কথা। তারা একটা যৌক্তিক আন্দোলন করছিলো, তাদের আন্দোলন রাজনৈতিক না। একটা রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সেভাবে হামলা কোন ভাবেই জাষ্টিফায়েবল না।
পুরো পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে ছাত্রলীগের কিছু ইউনিট একটু অতি-উৎসাহী হয়ে পড়েছে। আজকে সকালেও শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ছাত্রদের সাথে কথা বলেছেন, কোন হামলা হবে না কথা দিয়েছেন। গতকাল মিরপুরে হামলা হয়েছে। নতুন কমিটি আসার দুইদিনের মাথায় ছাত্রলীগের ক্রেডিবিলিটি শূণ্যে। আবার কেউ এটাও দাবী করতে পারবে না গতকাল এবং আজকে ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলার ছাত্রলীগ জড়িত ছিলো না, তারা জড়িত ছিলো, প্রমান আছে, ফুটেজ আছে।
এবার আসি গুজব স্পেশালিষ্টদের ব্যাপারে। একজন অভিনেত্রী, যেমনই হোক, তার একটা ফ্যানবেজ আছে। সে কিছু বললে মানুষের কানে যাবে। তার এভাবে লাইভে এসে গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে একটা জটিল পরিস্থিতিকে আরো সংঘাতময় বানানোর চেষ্টাটাকে কিভাবে সে জাষ্টিফাই করবে? তার ফোন এখন অফ, সাংবাদিকরা তার সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন না।
সব মিলিয়ে আজকের দিনটা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা কালো দিন হয়ে থাকবে। একদল ছেলেমেয়ে, যারা চেয়েছিলো নিরাপদ রাস্তা, তাদের রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা এবং এরপর তাদের ওপর এই হামলা, কোনটার চেয়ে কোনটা বড় অপরাধ, সেটা যাচাই করতে যাওয়ার আর রুচি নেই। [ আপডেট ] অনেকেই ধরে নিয়েছে আমি সাফাই গাইছি, একাধিকবার সেটা উল্লেখ করার পরেও যেহেতু হয়নি। এই হামলা বর্বরচিত এবং এর কোন সাফাই হতে পারে না। এই ছাত্রছাত্রীরা আগামী বাংলাদেশের ভবিষৎ, এরা যদি আজকে এই রকম একটা দেশে বড় হয় আর তাদের নিরাপত্তা যদি আমরা দিতে না পারি, সেটা রাস্তায় হোক আর ময়দানে হোক, লানত আমাদের ওপরে। লানত সরকারের ওপর, তারা তাদের ভবিষৎ প্রজন্মের রক্ষা করতে ব্যার্থ, তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ, তাদের দ্বায়িত্ব পালনে ব্যার্থ।
[ সোর্স ]
- https://www.banglanews24.com/national/news/bd/667944.details
- https://www.banglanews24.com/national/news/bd/667914.details
- https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1526064.bdnews
- https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1526213.bdnews
- https://bangla.bdnews24.com/politics/article1526171.bdnews
- http://www.somoynews.tv/pages/details/123947/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A3%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE